ভাষা শহীদদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধা

ঢাকার শহীদমিনার আর বইমেলা ঘিরে মানব ঢল
সময় গড়ায় বাড়ে মানুষ। বাড়ে শ্রদ্ধার ফুল। মানুষের সেই ঢলে যেমন ছিলেন প্রবীণরাও তেমনি ছিল আগামীর দেশ গড়ার কাণ্ডারি শিশু কিশোররা। এই প্রচেষ্টা একুশের চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেয়ার। ভালোবাসার সূত্রে গেঁথে রাখার
একুশ-শুধু-বাংলাদেশের-নয়,-একুশ-গোটা-বিশ্বের
অণিরুদ্ধ, ঢাকা
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদমিনার ঘিরে ছিল মানব ঢল। একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ভাষাশহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর শহীদ মিনার খুলে দেয়া হয় সর্বস্তরের মানুষের জন্য। মুহূর্তেই ঢল নামে লাখো মানুষের। কানায় কানায় ভরে ওঠে স্মৃতির মিনার। খালি পায়ে, হাতে ফুল আর পোশাকে শোভা পায় ভাই হারানোর শোক। প্রভাত ফেরিতে অংশ নেওয়া মানুষের মুখে মুখে কালজয়ী গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি--।
ভোররাত থেকে মঙ্গলবার বেলা বারোটা পর্যন্ত ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে লাখো মানুষ জড়ো হন স্মৃতির মিনারে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের শ্রদ্ধার ফুলে ভরে উঠেছে শহীদ বেদি। একুশ বাঙালিকে গেঁথেছে এক অবিনাশী সূত্রে। দিয়েছে আত্মপরিচয়। জাতীয়তাবাদের সন্ধান। সেই সূত্র ধরেই ছয় দফা, ঊনসত্তর, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। তাইতো আবেগটাই যেন একটু বেশি। ভালোবাসা নিবেদনের পর্বটাও একটু আলাদা। একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে বইমেলা ঘিরে ছিল মানবঢল। সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুটের মেলায় অগুনতি পাঠক, লেখক ও সাধারণের পদচারণায় মুখরিত।
পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগর থেকে সাইকেল র্যালি ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকার শহীদ মিনারে শৈবাল ব্যানার্জির নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল
গুলশান থানা আওয়ামী লীগনের আইন বিষয়ক সম্পাদক নাসিরউদ্দিন মঈন বলেন, ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বের কোথাও মানুষ প্রাণ দিয়েছে, এমন নজির নেই। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষার জন্য লড়াই করেছেন। আর তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাভাষাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গলে স্থান করে দিয়েছেন।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাইসাইকেল করে একাধিক প্রতিনিধি দল ঢাকায় পৌছে শহীদমিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। চন্দননগর থেকে আসা ৮সদস্যের ‘ইন্দো-বাংলা ইন্টারন্যাশনাল সাইকেল র্যালি’র আয়োজক শিক্ষক শৈবাল ব্যানার্জী। ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে হ্রদয়ের টানে ছুটে আসেন। সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী মহুয়া ব্যানার্জী, শ্রীকান্ত মন্ডল, প্রণব মাইতি, কাজল, রমজান আলী, সত্যব্রত ভান্ডারী, অঞ্জন দাস ও প্রসেনজিৎ সরকার।
শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের ঢল
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়ে জানালেন, বাংলাভাষাকে প্রথম কাতারে নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখেন তিনি। ভালোবাসা প্রতিবছর তাদের টেনে আনে এ বাংলায়। এখানের মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসায় মুগ্ধ তারা। পথে পথে মানুষের যে ভালোবাসা তারা পেয়েছেন, তা ভোলার নয়।
জানালেন ভাষাশহীদদের প্রতি মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ তারা। সময় গড়ায় বাড়ে মানুষ। বাড়ে শ্রদ্ধার ফুল। মানুষের সেই ঢলে যেমন ছিলেন প্রবীণরাও তেমনি ছিল আগামীর দেশ গড়ার কাণ্ডারি শিশু কিশোররা। এই প্রচেষ্টা একুশের চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেয়ার। ভালোবাসার সূত্রে গেঁথে রাখার। শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে বোঝা গেল, একুশ শুধু বাংলাদেশের নয়, বাঙালির নয়। একুশ আজ গোটা বিশ্বের। একুশের টান উপেক্ষার সাধ্য হয়নি ভিন্ন ভাষাভাষীদেরও। ওপার বাংলা এপার বাংলা মিলে গিয়েছে একই টানে।
বাংলাদেশ কৃষক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকতা জেসমিন আক্তার বলেন, ভাষা জন্য প্রাণ উৎসর্গের নজির নেই। বাংলার অকুতোভয় সন্তানেরা ভাষার অধিকার আদায় করতে গিয়ে রক্ত দিয়েছে। সেই ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই ছুটে আসা।