Anirban Library : বিপ্লব বসত করে যেখানে, ‘অনির্বাণে’র দেওয়ালে আত্মবিশ্বাসের চিত্রকল্প

গুণিজন সংবর্ধনা
(এক)
উপকূল ঘুরে এসে কলম ধরনের এ. এইচ. ঋদ্ধিমান
এলাকাটা প্রান্তিক বলা যাবে না। আমরা যখন সেখানে পৌছালাম তখন রাত প্রায় ন’টা। গাছগাছালি ঘেরা জনপদের রাস্তাটির সংস্কার চলছে। ছিমছাম পরিবেশ। রাতের বেলাতেও তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। জায়গাটির নাম মাহমুদ কাটি। এটি পাইকগাছা উপজেলার একটি গ্রাম। যার অবস্থান বাংলাদেশের খুলনা জেলা সদর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে। এখানেই ২২ বছর আগে আলো জ্বলেছিলো জ্ঞানভাণ্ডারের। তারিখটা ১০ ডিসেম্বর ১৯৯০।
লাইব্রেরীর একাংশ
গাড়ি থেকেই মাইকে আয়োজনের ঘোষণা শোনা যাচ্ছিল। আমরা বালির পথ পেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে যেতেই দেখা গেলো বড়সাড়ো এক ভবন। সেখানে খোদাই করে লেখা ‘অনির্বাণ লাইব্রেরী’। ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ। ইচ্ছের শক্তি কতটা সফলতা এনে দিতে পারে-যার ‘শিখা অনির্বাণ’ আলোকিত করে চলেছে গোটা এলাকা। মানুষের কাছে অনির্বাণ লাইব্রেরী এক স্মারকে পরিণত হয়েছে। হয়ে ওঠছে আগামী ঠিকানা। ইতিহাস সমৃদ্ধ এই পাঠাগারে রয়েছে মূল্যবান বই। দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে ইতিহাসের নায়কদের। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তরুনদের। স্বাস্থ্যসেবা, লেখাপড়া, খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা সকল ক্ষেত্রেই আলো ছড়াচ্ছে অনির্বাণ।
বিশিষ্টজনদের পরিদর্শন
নিখিল বাবু তথা নিখিল চন্দ্র ভদ্র জানালেন, শোষণ, নিপীড়ন, কর্মবঞ্চিত এবং আর্থসামাজিক দিক থেকে দাবিয়ে রাখা পাকিস্তানী শাষনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নয়মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগামী প্রজন্মকে এগিয়ে নেবার অঙ্গীকারেরই ফসল ‘অনির্বাণ লাইব্রেরি’। এটি ‘মানুষে’ মানুষের জ্ঞান অর্জনের পবিত্র স্থান। যেখানে সময় কাটিয়ে মানুষ নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারে। যার জন্য কোন ব্যয় করতে হয়। মানব কল্যাণের মশাল জ্বালিয়ে দু’বাহু বাড়িয়ে দিয়েছে অনির্বাণ।
মূলত পাইকগাছা হচ্ছে একটি উপকূল এলাকা। পাইকগাছা জনপদকে ধূয়েমুছে বহমান কপোতাক্ষ। কান পাতলে শোনা যায় মধূ কবি তথা মধূসদন দত্তের কণ্ঠ স্বর। কিন্তু কপোতাক্ষ আজ কেঁদে চলেছে অবিরাম। কেউ শুনচ্ছে না তার কান্না।
কম্পিউটার শিক্ষাকার্যক্রম
নিখিল বাবু জানালেন, অনির্বাণ মাহমুদ কাটিতে জন্ম নিলেও তার আবেদন ছড়িয়ে পড়েছে খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের মাঝে। দুর-দূরান্তের অনেকেই এই লাইব্রেরির কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। যে প্রতিষ্ঠানটি কেবলমাত্র বই পড়ার স্থানে সীমাবদ্ধ থাকেনি। প্রতিষ্ঠানটি হয়ে ওঠে অঞ্চলে প্রগতিশীল সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম কেন্দ্রস্থল। চলবে