কেন ডিসেম্বরেও ঘূর্ণিঝড় নিম্নচাপ?

ছবি সংগ্রহ
সন্তোষ সেন
প্রথমেই একটি তথ্যের দিকে চোখ ফেরানো যাক। বিগত ১২৯ বছরের মধ্যে কেবলমাত্র ১৯৮১ সালের প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় ‘থ্রি-বি’র পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে জাওয়াদ। এর পিছনে ভূউষ্ণায়ন কতটা দায়ী? এই সময় ভারত মহাসাগরের তাপমাত্রা ছিল প্রায় ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিজ্ঞান বলছে, সমুদ্র জলের উষ্ণতা ২৭ ডিগ্রির উপরে থাকলে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়। ঠিক এই কারণেই শীতকালেও জাওয়াদের আবির্ভাব।
উষ্ণ সমুদ্র থেকে জলীয়বাষ্প শুষে নিয়ে ধাপে ধাপে শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণাবর্ত থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে ফুঁসতে থাকা জাওয়াদ শান্ত হয়ে গেলো কয়েক ঘন্টার মধ্যেই। সৌজন্যে আবারো সমুদ্রের উষ্ণতা। ঠিক এই সময় আরব সাগরের তাপমাত্রা কম থাকায় বাংলায় এসে জাওয়াদ শক্তি হারিয়ে নিম্নচাপে পরিণত হল। অর্থাৎ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহার ও নির্বিচারে জঙ্গল ধ্বংসের হাত ধরে পৃথিবীর স্থলভাগ ও সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি সরাসরি দায়ী ফনি আম্পান ইয়াস ও জাওয়াদের মত ঘূর্ণিঝড় তৈরির পিছনে।
প্রতিটি ঘূর্ণিঝড় ও ব্যাপক বৃষ্টিপাতের ফলে বিপর্যস্ত হয় মানুষের জীবন-জীবিকা ও কৃষিকাজ। এবারও কলকাতা ও সুন্দরবনের এক বড় অংশ জলমগ্ন হয়ে পড়ল। শীতের শাক সবজি, সরষে, মাঠ থেকে তুলে আনতে না পারা পাকা ধান ও সদ্য বসানো আলু চাষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলো সারা দক্ষিণবঙ্গ জুড়েই। কৃষকরা আবারও সর্বস্বান্ত হবেন, বাড়বে শাকসবজি ও চালের দাম।
এরপরেও কী আমরা কিছু শিখব না? বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদদের বিভিন্ন তথ্য গবেষণা রিপোর্ট বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের ১২টি শহর জলের তলায় তলিয়ে যাবে। বাড়বে ভূউষ্ণায়ন, আরো বাড়বে সমুদ্রজলের তাপমাত্রা, আরো দ্রুত হারে গলবে মেরুপ্রদেশ ও হিমালয়ের হিমবাহ, ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ও সংখ্যা দুই-ই বাড়বে লাফিয়ে লাফিয়ে। আমরা কি চুপচাপ বসে প্রহর গুনবো সেই ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের, নাকি বিপর্যস্ত প্রকৃতি-পরিবেশ মেরামতের দাবিতে সকলে মিলে পথে নামবো এক্ষুনি?
লেখক : সন্তোষ সেন, বিজ্ঞান শিক্ষক, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুল, কলকাতা
E-mail : santoshsen66@gmail.com