Durga Puja : দুলাল কৃষ্ণ শিকদারের সম্প্রীতির বন্ধন ‘শিকদার বাড়ির দুর্গাপূজা’  

Durga Puja : দুলাল কৃষ্ণ শিকদারের সম্প্রীতির বন্ধন ‘শিকদার বাড়ির দুর্গাপূজা’  

শিকদার বাড়ির দূর্গাপূজার প্রতিমা 

বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা বাগেরহাট। এখানের হাকিমপুর গ্রামের ‘শিকদার বাড়ি’র দুর্গাপূজা এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ৮০১টি প্রতিমা দিয়ে পূজার আয়োজন করা হয়। সম্প্রীতির বন্ধন ‘শিকদার বাড়ির দুর্গাপূজা’ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন। শিগগিরই এটি বই আকারে প্রকাশিত হবে। ইংরেজিতে বই  লেখায় হাত লাগাবেন, শিক্ষাবিদ, গবেষক, পরিবেশ কন্যা এবং লেখক ড. বিরাজলক্ষী ঘোষ। এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলা ও ইংরেজিতে ৮০ গ্রন্থ রয়েছে তাঁর।  

অনিরুদ্ধ 

প্রয়াত দুলাল কৃষ্ণ শিকদার একজন শিক্ষানুরাগী। নিভৃত গাঁয়ে সেই কুপি-হারিকেনের যুগে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন দুলাল বাবু।  সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আজ কলেজে উন্নিত হয়েছে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ একাধিক শিক্ষালয়ের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন-দুলাল বাবুর সুযোগ্য সন্তান লিটন শিকদার। অতান্ত বিনীয়, বন্ধবাৎসল লিটন বাবু বাবার পদাঙ্ক অনুসরন করে ব্যবসার পাশাপাশি দুর্গাপূজার আয়োজনও করে আসছেন। 

দুলাল কৃষ্ণ শিকদার

সরেজমিন শিকদার বাড়ি  

বাগেরহাট কাটাখালি মোড়ে গন্তব্য ‘শিকদার বাড়ির’ বলতেই অটোওয়া বললো ওঠে বসুন। কোন প্রশ্ন না করেই ওঠে বসলাম। খুলনা-মোংলা  হাইওয়ে দিয়ে উড়ে চলছে আটোরিকশা। কিছুদূর যাবার পর হাইওয়ে থেকে বামে মোড় নিয়ে অটো প্রবেশ করে একটি লিংক রুটে। মাইল ফলকে লেখা গুচ্ছগ্রাম চুলকাঠি। দু’পাশে ছায়াঘেরা পরিবেশ। মাছ চাষের বেশ কিছু পুকুর দেখা গেলো। অটোচালক জানান, চিংড়িসহ নানা জাতের মাছ চাষ হয় এসব পুকুরে। আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে অটো গিয়ে থামলো ‘সিংহ দুয়ারী’ বাড়ির সামনে। অটোওয়ালা বললেন, এটাই শিকদার বাড়ি। 

সিংহ দুয়ারী শিকদার বাড়ির 

বাড়ি দক্ষিণ পাশে বিশাল প্যাণ্ডেল। কম করে হলেও হাজার খানেক দর্শনার্থী এক সঙ্গে বসে পুজার নানা আয়োজন উপভোগ করতে পারবেন। প্যাণ্ডেলের পাশের রাস্তাটি সাজিয়ে তুলতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক কাজ করে চলেছেন। তাদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ‘শিকদার বাড়ির পুজো সকলের পুজো’। মনে হচ্ছে, আপনি--কথা  কথা শেষ করা  গেলো না। ছোঁ মেরে মুখের কথা টেনে নিয়ে বললেন, আমি মুসলিম তাতে কি? এই গোটা অঞ্চলের পুজো এটি। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে ঘুরে ফিরে আনন্দ উপভোগ করি। এই দেখুন কাজ করছি সবাই মিলে। গায়ে কি লেখা ‘আমরা মানুষ’! 

মানুষের এই ভালোবাসা এবং সম্প্রীতি মনে করিয়ে দেয়- 

‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মোসলমান।
মুসলিম তার নয়ণ-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ॥
এক সে আকাশ মায়ের কোলে 
যেন রবি শশী দোলে,
এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান’

হাকিমপুর গ্রামই নয়, বাগেরহাট জেলা তথা বাংলাদেশের মানচিত্র ছাপিয়ে এশিয়া জয়ে করে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে ‘শিকদার বাড়ির’ পুজো এবং সম্প্রীতির খ্যাতি। 

বিশাল প্যান্ডেল

শিক্ষানুরাগী দুলাল কৃষ্ণ শিকদার 

এক নিভৃত গ্রাম হাকিমপুর। গ্রামের অধিকাংশ মানুষই অশিক্ষিত। এখানের ছেলে-মেয়েদের  জন্য কোন  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই।  যে করেই হোক গ্রামের  শিক্ষা প্রসারের একটা বিহীত করতেই হবে। ভাবতে থাকেন দুলাল বাবু। নির্ঘুম রাত কাটে তার। মাঝ রাতে বিছানা ছেড়ে ঘরের মধ্যে পায়চারি করেন, ভাবেন শত বাধা ডিঙ্গিয়ে  এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন তিনি।  মাঝ রাতে দুলাল বাবু যখন ভাবনার অতলে, তখন যেন স্বামী জী দাঁড়িয়ে বলছেন, 

‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর!’ 

অবশেষে যেই ভাবনা সেই কাজ। দুলাল বাবু সিদ্ধান নিলেন, নিজের অর্থে ‘হাকিমপুর পল্লী মঙ্গল স্কুল’ প্রতিষ্ঠাতা করবেন তিনি। কাঁদাজল মাড়িয়ে ছেলে মেয়েদের স্কুলে পথে দেখতে পেয়ে নিভৃতে চোখের জল ফেলেন দুলাল কৃষ্ণ শিকদার। মনে মনে ভাবেন, আজ যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তিনি গড়ে দিয়ে গেলেন, একদিন তার সন্তানরা এলাকার মানুষের জন্য আরও বড় করার কাজে হাত লাগাবে। 


 দুলাল বাবু মনে অনুরণন হতে থাকে- 

গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান!
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি,
সব দেশে, সব কালে, ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।
‘মানুষ এনেছে গ্রন্থ, গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোন’

(প্রতিবেদন নির্মাণ সহযোগিতা পুজা দেবী-মা)