Hijra community : হিজড়া জনগোষ্ঠীও কাজের নজির গড়তে পারেন

প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন হিজড়া জনগোষ্ঠী : ছবি সংগ্রহ
‘হিজড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করে সার্বিক উন্নয়নের ভাবনা থেকেই ২০১৩ সালে যুগান্তকারী উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে হিজড়াদের স্বীকৃতি দিলেন তিনি। হিজড়া সম্প্রদায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তারা চিরকৃতজ্ঞ’
নিজস্ব প্রতিনিধি
হিজড়া, তৃতীয় লিঙ্গ বা রুপান্তরিত লিংগ (পুরুষ বা মহিলা) যে নামেই ডাকা হোক না কেন, পরিবার ও সমাজে এরা নানাভাবে অবহেলিত ও বঞ্চিত। হিজড়া সম্প্রদায় মোট জনসংখ্যার ক্ষুদ্র অংশ হলেও আবহমান কাল থেকে তারা অনগ্রসর গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। সমাজে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হিজড়া জনগোষ্ঠী পারিবারিক, আর্থসামাজিক, শিক্ষা, বাসস্থান, স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা থেকে বহু পিছিয়ে।
সরকারী ঘর পেলেন হিজড়া জনগোষ্ঠী
হিজড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করে সার্বিক উন্নয়নের ভাবনা থেকেই ২০১৩ সালে যুগান্তকারী উদ্যোগ নিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে হিজড়াদের স্বীকৃতি দিলেন তিনি। হিজড়া সম্প্রদায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তারা চিরকৃতজ্ঞ।
হিজড়া সম্প্রদায়ের কল্যাণে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছে ‘বাংলাদেশ হিজড়া কল্যাণ ফাউণ্ডেশন’। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট আবিদা সুলতানা মিতু জানান, ৯৭ সাল থেকে তিনি হিজড়াদের উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন। ২০১৩ সালে সংগঠনটি সরকারী রেজিস্টেশন পায়। সারাদেশেই হিজড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। সরকারীভাবে সহায়তা মিলছে বলেও জানান। তার মতে বাংলাদেশে হিজড়ার সংখ্যা ১৫ লাখের বেশি। তবে সরকারের সমাজসেবা অধিদফতরের প্রাথমিক জরিপে বাংলাদেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। বেসরকারী হিসাবে কেউ কেউ বলছেন হিজরা সংখ্যা সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। সেই অর্থে হিজড়াদের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও সুযোগ পেলে এই জনগোষ্ঠীও ভালো কাজের নজির গড়তে পারেন। তার প্রমাণ করোনাকালীন স্বাস্থ্যসেবা।
আবিদা সুলতানা মিতু
আবিদা সুলতানা মিতু আরও জানান, করোনার প্রকোপকালে ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে অসুস্থ মানুষের সেবায় অংশ নেন হিজড়া জনগোষ্ঠী। বিষয়টি সাধারণ মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি। গোটা বিশ্বে নেমে আসে বিপর্যয়। করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিকে অনেক ক্ষেত্রে সন্তানরাও শেষ বিদায় জানাতে পারেননি। ঘাটে ঘাটে মহাতঙ্ক মানুষকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষকে রক্ষায় জরুরী আইন, লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, হাটবাজার সব বন্ধ! মানুষ পরিচিতি হলো এক নতুন সময়ের সঙ্গে।
ঠিক সেই মুহূর্তে খাবারসহ নানা প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিলিয়েছেন অনেকে। মহাদুর্দিনে ভয়কে তুচ্ছ করে করোনা আক্রান্ত রোগী ও তাদের স্বজনদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো! ঢাকা মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা আক্রান্ত রোগী এলেই তাৎক্ষণিক সহায়তা দিয়েছেন তারা।
হিজড়া জনগোষ্ঠীর
২০১৪ সালের ২৬শে জানুয়ারী বাংলাদেশ মন্ত্রিসভা সরকারী ইশতেহারে তৃতীয় লিঙ্গকে এই বলে স্বীকৃতিপ্রদান ও তালিকাভুক্ত করে যে, ‘বাংলাদেশ সরকার হিজড়া সম্প্রদায়কে হিজড়া লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।’ এই ঘোষণা বাংলাদেশের হিজড়া সম্প্রদায়ের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হয়। সরকারের হিজড়াদের স্বীকৃতিদান এবং সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের পর হিজড়াদের মধ্যে আশার আলো জাগিয়ে তোলে।
হিজড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে প্রশিক্ষণ
এই জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ২০১৩ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ৬৪ জেলায় নানামুখী কার্যক্রম চালু করে সরকার। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থ বছরে মোট বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। কর্মসূচির আওতায় স্কুলগামী হিজড়া শিক্ষার্থীদের জন্য ৪ স্তরে (জনপ্রতি মাসিক প্রাথমিক ৭০০, মাধ্যমিক ৮০০, উচ্চ মাধ্যমিক ১০০০ এবং উচ্চতর ১২০০ টাকা হারে) উপবৃত্তি প্রদান। ৫০ বছর বা তদুর্ধ বয়সের অক্ষম ও অসচ্ছল হিজড়াদের জন্য মাথা পিছু মাসিক ৬০০ টাকা ভাতা, কর্মক্ষম হিজড়া জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধি ও আয়বর্ধনমূলক ৫০ দিনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ শেষে ১০ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান ইত্যাদি।