Journalist killed in Pakistan : পাকিস্তানে দিবালোকে সাংবাদিক হত্যা,  করাচিতে  ক্রমবর্ধমান সড়ক অপরাধের জানান দিচ্ছে

Journalist killed in Pakistan : পাকিস্তানে দিবালোকে সাংবাদিক হত্যা,  করাচিতে  ক্রমবর্ধমান সড়ক অপরাধের জানান দিচ্ছে

ছবি সংগৃহিত 

এননিউজ ডেস্ক 

আতহার মতিন ১ জানুয়ারি থেকে করাচিতে সংঘটিত সড়ক ডাকাতির ঘটনাগুলোতে নিহত অন্তত ১৫ জনের একজন। ২০১৯ সালে সড়কে সংঘটিত অপরাধে ৪৪ জন নিহত এবং ২৮২ জন আহত হয়েছিল, আর শুধুমাত্র চলতি বছরের জানুয়ারিতেই ১০ ব্যক্তি নিহত হয়েছে।

পাকিস্তানের বন্দর নগরী করাচিতে সন্তানদের স্কুলে নামিয়ে দিতে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরপরই, স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলের এক সংবাদ প্রযোজক আতহার মতিন একটি মোটরবাইকে উপবিষ্ট দুই ব্যক্তিকে বন্দুকের মুখে একজন নাগরিককে ছিনতাই করতে দেখেন। ছিনতাইকারিদের থামাতে মতিন তার গাড়ি দিয়ে মোটরসাইকেলটাকে ধাক্কা দিলে ছিনতাইকারিরা এক পথচারীর মোটরসাইকেল চুরি করে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার আগে সাংবাদিকের গাড়িতে গুলি করে। সংবাদ প্রযোজক তার গাড়ির ভেতরে ঘটনাস্থলেই মারা যান। একটি থানা থেকে মাত্র কয়েকশ’ মিটার এবং আধাসামরিক রক্ষীদের সদর দপ্তর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ঘটনাটি ঘটে।

ওই সাংবাদিক এখন করাচিতে ১ জানুয়ারি থেকে এ যাবৎ সড়কে ঘটে যাওয়া ডাকাতির ঘটনায় নিহত অন্তত ১৫ জনের মধ্যে একজন। এইসব ঘটনা বর্ধিত অপরাধের অংশ যার জন্য সরকারি কর্মকর্তা, ভুক্তভোগী ও বিশেষজ্ঞরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিষ্ক্রিয়তা এবং আদালতে বারবার অপরাধীদের কম দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হারকে দায়ী করেছেন। প্রায় ১৮ মিলিয়ন মানুষের শহর করাচি ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থানগুলির একটি হিসেবে খ্যাত ছিল। পরে সেনাসদস্যরা সড়কগুলিকে আরও নিরাপদ করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যা জনপ্রিয় করাচি অপারেশন নামে পরিচিত। এর ফলে অপরাধের হার হ্রাস পেয়েছিল এবং দেশের কিছু দাগী আসামীকে কারাগারে বন্দী করা হয়েছিল।

তারপরেও সাম্প্রতিক মাসগুলিতে করাচির রাস্তায় অপরাধ ফিরে এসেছে। যা কর্তৃপক্ষ ও নাগরিকদের উদ্বিগ্ন করে, যারা এমন একটি শহর নিয়ে ভীত যেটি পাকিস্তানের প্রধান পুঁজিবাজার, যেটি নগদ-সংকটে থাকা দেশের সকল পণ্য পরিবহন ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করে এবং যেটি পাকিস্তানের বেশিরভাগ কর-রাজস্ব আয় করে থাকে।  করাচি আরও একবার আগুন ও রক্তে নিমজ্জিত হচ্ছে, মতিন হত্যার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ সিন্ধুর প্রাদেশিক সরকারকে, যেটির রাজধানী করাচি, কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে এক বিবৃতিতে একথা বলেন। 

প্রদেশের পরিস্থিতি আর পুলিশের নিয়ন্ত্রণে নেই, মন্ত্রী যোগ করেন। সিন্ধুর মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ গত দেড় মাসে সড়কে অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা স্বীকার করেন এবং আরও বলেন যে, পুলিশ ও রক্ষীদের অবহেলা ছিল এক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা। আমি সাধারণত গোপনে শহর পরিদর্শন করি, কিন্তু পুলিশ ও প্রহরীদের সড়কে অথবা সংশ্লিষ্ট এলাকায় টহল দেওয়ার দায়িত্বে খুব কমই দেখেছি, এই সপ্তাহে অনুষ্ঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক একটি সরকারি সভায় তিনি এ কথা বলেন। এটা অগ্রহণযোগ্য। শহরের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন করেন আপনাদের স্টেশন হাউসের লোকেরা কোথায়, তারা কী করছে এবং কী কার্যসম্পাদন করেছে? রক্ষীদের একজন মুখপাত্র আরব নিউজের উল্লেখ করে সেনাবাহিনীর মিডিয়া শাখা আইএসপিআরের কাছে এই বিষয়ে তাদের মন্তব্য জানতে চান। আইএসপিআরের পক্ষ থেকে জবাব চাওয়ার নানা চেষ্টা করেও কোনও সাড়া মেলেনি। করাচির পুলিশ প্রধান গোলাম নবী মেমন বলেছেন যে, তাঁর বাহিনী সড়কে ক্রমবর্ধমান অপরাধ দমনে কঠোর পরিশ্রম করছে।

ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে, সিন্ধু সরকার হঠাৎ করে করাচি পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ইমরান ইয়াকুব মিনহাসকে এই পদে আসার মাত্র নয় মাসের মাথায় অপসারণ করে এবং মেমনকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে। করাচি প্রশাসক মুর্তজা ওয়াহাব আরব নিউজকে নিশ্চিত করেছেন যে, সড়কে অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষভাবে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।

পুলিশের পরিসংখ্যান একটি বর্ধনশীল সমস্যাকেই তুলে ধরে। ২০১৯ সালে করাচিতে ছিনতাই অথবা তাদের গাড়ি বা মোটরবাইক ডাকাতি প্রতিরোধ করতে গিয়ে ৪৪ ব্যক্তি নিহত এবং ২৮২ জন আহত হয়। ২০২০ সালে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫১ এবং আহতের সংখ্যা ৩৩২ হয়েছিল। ২০২১ সালে এটি আরও বেড়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৭২ এবং আহতের সংখ্যা ৪৪৫। চলতি বছর শুধু জানুয়ারিতেই সড়কে সংঘটিত অপরাধে ১০ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন ৭০ জন। ফেব্রুয়ারিতে মতিনসহ পাঁচজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। রাস্তায় গাড়ি ছিনতাই এবং সেল ফোন চুরির সংখ্যাও ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। 

‘২০১৮ সালে রাস্তার ধারে ছিনতাইয়ের বিভিন্ন ঘটনায় প্রায় ১২০টি গাড়ি ও ৯৪৯টি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছিল, ২০২১ সালে এই সংখ্যা যথাক্রমে বেড়ে হয়েছিল ২৩৫ ও ৪৩৮৮। ২০১৮ সালে সড়কে ডাকাতিকালে প্রায় ১৯,৮২৬টি সেলফোন চুরির ঘটনা ঘটেছিল এবং ২০২১ সালে চুরি যাওয়া সেলফোনের সংখ্যা ছিল ২৫,১৩৯’।

পরিসংখ্যান অনুসারে, বেশিরভার হত্যাকাণ্ড ঘটেছে মোবাইল ফোন ডাকাতির সময়। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন উজমা বরকত আলীর ২০ বছর বয়সী ছেলে ওসামা, যিনি এই মাসের শুরুর দিকে উত্তর করাচির একটি ফাস্ট-ফুড জয়েন্টে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। সেই সময় রাস্তার ডাকাতরা তার সেলফোন চুরি করার চেষ্টা করে তাকে কাছে থেকে গুলি করে। এই ঘটনা যেন আমার ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছে, আরব নিউজকে উজমা আলী বলেন। তারা আমার কাছ থেকে আমার পৃথিবীটাই যেন কেড়ে নিয়েছে।

আমি শুধু ন্যায়বিচার চাই, তিনি বলেন। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত, যাতে তারা অন্যান্য মায়ের ওসামাদের হত্যা করতে না পারে। পুলিশ প্রধান মেমন বলেন, তার বাহিনী ওসামার মতো নিহতদের হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনবে। কিন্তু ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুরা, সেইসাথে বিশেষজ্ঞগণ, আরব নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, তারা বিশ্বাস করেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির ‘নিষ্ক্রিয়তা’, পাশাপাশি কম হারে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি সমস্যাটির মূলে একটি বড় কারণ।

নিহত সংবাদ নির্মাতার ভাই তারিক মতিন, এই হত্যার জন্য পুলিশ, রক্ষীসেনা এবং সিন্ধু সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন যে, অপরাধীদের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের অযোগ্যতা ও অপরাধের প্রতি পরোক্ষ সমর্থন উভয়ই দায়ী। মতিনের কর্মস্থল সামা টিভির সংবাদ পরিচালক ফারহান মল্লিক আরব নিউজকে বলেন, সড়কে সংঘটিত অপরাধের মাত্রা এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে করাচির প্রতিটি নাগরিক অত্যন্ত হতাশ হয়ে পড়েছে, কিন্তু পুলিশ ও রক্ষীরা কেউই কিছুই করছে না। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছিল সেখান থেকে মাত্র কয়েক শ’ মিটার দূরে প্রহরীদের একটি ফাঁড়ি অবস্থিত এবং এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে অনেক কথা বলে, যারা নাগরিকদের অপরাধীদের করুণার উপর ছেড়ে দিয়েছে।

মাজহার আব্বাস, একজন ঝানু সাংবাদিক, যিনি চার দশক ধরে করাচিতে অপরাধ বিষয়ে কাজ করেছেন, তিনিও এই বৃদ্ধির জন্য পুলিশ ও প্রহরারত সেনাদের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন এবং বলেছেন যে, কম হারে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টিই সমস্যাটিতে অবদান রেখেছে। সিন্ধু সরকারের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বছর সড়কে সংঘটিত অপরাধের ঘটনাগুলোতে গ্রেপ্তার হওয়া ৭,১৭৯ জনের মধ্যে ৩,৬৬৬ জন জামিনে এবং ৩,৫১৩ জন বেকসুর খালাস পেয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করা পুলিশ ও রক্ষী উভয়ের দায়িত্ব, আব্বাস বলেন। পুলিশের যোগসাজশ না থাকলে এবং তারা তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে কোনো অপরাধ ঘটতে পারে না। এটি [ক্রমবর্ধমান অপরাধ] পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং বিচারের ঘাটতির সাথে আরও বেশি সম্পর্কযুক্ত, যা অপরাধীদের রাস্তায় অপরাধ সংঘটনের স্বাধীনতা দেয়, তিনি যোগ করেন।

পরিসংখ্যান সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শাহ বলেন, এটি পুলিশের দুর্বলতা যে তারা মামলাগুলি সঠিকভাবে তদন্ত করছে না। পুলিশ প্রধান মেমন স্বীকার করেছেন যে পুলিশের মধ্যে কতিপয় সদস্যের অপরাধীদের সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে তবে তা খুবই ক্ষুদ্র ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং এই ধরনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।  তিনি পুলিশের নেয়া নতুন নতুন পদক্ষেপের রূপরেখাও তুলে ধরেন। একটি নিরাপদ শহর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে, কিন্তু তা কার্যকর হওয়ার আগে সিন্ধু পুলিশ সুপারস্টোর ও দোকানের মতো ব্যক্তিগত স্থাপনাগুলিতে সিসিটিভি বসানোর জন্য উৎসাহিত করেছে, মেমন বলেন। গত কয়েক বছরে প্রায় ৩০,০০০ ক্যামেরা লাগানো হয়েছে এবং সেগুলি অপরাধীদের শনাক্ত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু ইউনিভার্সিটি অফ ওয়ারউইকের পুলিশি আচরণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শিক্ষাবিদ জোহা ওয়াসিম বলেন, সড়কে অপরাধ প্রতিরোধের জন্য আয় বৈষম্য, বেকারত্ব, শ্রেণিবৈষম্য, রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের অভাব ও শ্রমিক শ্রেণির ক্ষমতায়নের মতো কাঠামোগত সমস্যাগুলির সমাধান করতে হবে।

তিনি আরব নিউজকে বলেন, ‘পুলিশি কার্যক্রমের দ্বারা (পুলিশ বা রক্ষীদের মাধ্যমে যেটাই হোক না কেন) শুধুমাত্র রাস্তার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে, এটি সম্পূর্ণরূপে অপরাধ প্রতিরোধ করতে পারে না।’ ’খুব বেশি হলে, বিপজ্জনক পরিস্থিতি অথবা বাধা-বিপত্তি মোকাবেলায় এবং গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহের জন্য আপনি নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করতে পারেন। এটি অপরাধ কমাতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু এটি মানুষকে অপরাধ করা থেকে বিরত রাখতে পারে না। ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠি, জাতিগত অপরাধী চক্র, জঙ্গি শাখাগুলি ধ্বংস করার উদ্যোগ একটি বিশেষ ধরনের সহিংস অপরাধ কমাতে সাহায্য করেছে,’ ওয়াসিম বলেন। "সড়কে সংঘটিত অপরাধ হচ্ছে একটি ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ যা অনেক বড় মাপের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে জন্ম নেয়।’
পনইমাত খান, আরব নিউজ, পাকিস্তান, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২