Mars procession in Dhaka : ঢাকার রাজপথে গড়ালো মঙ্গলশোভাযাত্রা

নিজস্ব ছবি
নব-আনন্দে জেগে ওঠে ঢাকা
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
দিন গনণায় দু’বছর তিন মাস। এই দীর্ঘ সময় পৃথিবীর সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষও ছিলো করোনার শিকলবন্দী। এবারে মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নিলো পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষে। বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপন হয়ে থাকে ১৪ এপ্রিল। ঢাকার মঙ্গলশোভাযাত্রা ইউনেস্কো স্বীকৃত। ‘তুমি নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’ স্লোগান নিয়ে রাজপথ কাঁপিয়ে আয়োজন হলো ঐতিহাসিক মঙ্গলশোভাযাত্রা। তবে মঙ্গল শোভাযাত্রার রাজপথ পরিক্রমা সংক্ষিপ্ত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরেই যা সীমাবদ্ধ ছিলো। বর্ষবরন আয়োজন ঘিরে ছিলো কয়েকস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বাংলা নববর্ষবরণে ঢাকার রাজপথে দেখা গেল সেই পরিচিত দৃশ্য। করোনার শিকলমুক্ত বাঙলার আকাশে-বাতাসে নববর্ষের রং ছড়িয়ে পড়ে। নবজাগরণে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে লাখো প্রাণ। মঙ্গল শোভাযাত্রায় হাজারো কণ্ঠে উচ্চারিত হয় মানুষের মঙ্গলবারতা। এর নাম সম্প্রীতির বাংলাদেশ। যেখানে ধর্ম কোন বাধা নয়। প্রাণের সুরে দু’বাহু বাড়িয়ে সম্মিলিত পথ চলার দেশ বাংলাদেশ। দু’বছর যে আবেগ বন্দী হয়েছিলো, তা আজ পহেলা বৈশাখে রং ছড়ায় মুক্ত বাতাসে। রমনাবটমূল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ এলাকা জুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এসব রাস্তায় ভোর থেকে বেলা দুটো পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
বহু বিদেশিরাও ছুটে আসে মঙ্গল শোভাযাত্রায়
রমজান মাসেও পহেলা বৈশাখের আয়োজনে কোন ভাটা পড়েনি। বৈশাখে বাংলাদেশে একশ’ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। হাজার বছর ধরে বাঙালির সাংস্কৃতির ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে পহেলা বৈশাখ তথা বাংলানববর্ষ। বিগত দুই বছরের গ্লানি মুছে আগামীর সুন্দর প্রত্যাশায় রমনা রটমূলে ছায়ানটের শিল্পীদের শতকণ্ঠে উচ্চারিত হয় ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’। হাজার বছরের আবহমান বাংলার সংস্কৃতিকে সঙ্গী করে পালন করা হলো পহেলা বৈশাখ। এদিন কাকডাকা ভোর থেকেই ঢাকার বাসিন্দাদের গন্তব্য ছিলো রমনবটমূল এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মঙ্গলশোভাযাত্রা ঘিরে। বাংলাবর্ষবরণ আয়োজনে মেতে ওঠেছিলো বাংলাদেশের আমজনতা। সেই অর্থে গোটা বাংলাদেশটাই বর্ষবরণের মঞ্চে পরিণত হয়।
বাংলাদেশে যেকোন উৎসবই সার্বজনিন। কি পহেলা বৈশাখ কি দুর্গোৎসব। যে কোন পার্বন যেন সম্মিলিত চেষ্টায় সমৃদ্ধ আগামী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, সাংস্কৃতির সঙ্গে ধর্মের সঙ্গে কোন বিরোধ নেই। রমজান মাস হলেও প্রাণের ছোঁয়ার কোম কমতি নেই আয়োজনে। কতটা সাজানো হলে বাংলায় রং ছড়ায়, ততটাই করা হয়েছে। দু’বছরের পর আয়োজন কেন ঘাটতি থাকবে। উৎসব প্রিয় বাঙলি পান্তা খেতে না পারুক, তাতে কি? মনের আনন্দে বর্ষবরণের ছন্দে হেটে বেড়াবে মুক্ত বাতাসে, তাতেই বা কম কিসের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ উপলক্ষে বাণীতে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে সারা বছরের দুঃখ-জরা, মলিনতা ও ব্যর্থতাকে ভুলে সবাইকে নব-আনন্দে জেগে ওঠার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।