Rabindranath Tagore : রং তুলিতে বর্ণীল কবিগুরুর ১৬১তম জন্মবার্ষিকী

Rabindranath Tagore : রং তুলিতে বর্ণীল কবিগুরুর ১৬১তম জন্মবার্ষিকী

‘বাঙালির কবি, বাঙালা ভাষাভাষি মানুষের কবি, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষি মানুষের কবি, বিশ্বকবি ও দার্শনিক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ 

 এ. এইচ. ঋদ্ধিমান, ঢাকা 

কবিগুরুর গান-সাহিত্য নিয়ে যেকোন আয়োজন আলাদা মাত্রা যোগ হয়ে থাকে বাংলাদেশে।  বরাবরই আয়োজনে ভিন্নতা রয়েছে। বিশ্বকবির সাহিত্য ও শিল্পকর্ম নিয়ে নিয়ে নান্দনিক আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সবসময়ই অগ্রগামী। এবারের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী ঘিরে যেকোন সময়ের চেয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন। 

নান্দনিক ও মনোমুগদ্ধকর চিত্র প্রদর্শনীর সবিস্তারে তুলে ধরেন বাংলাদেশ  শিল্পকলা একাডেমীর চারুকলা বিভাগের পরিচালক মাহবুবা করিম। যার হাত ধরে বাংলাদেশে নারী ফুটবলের জন্ম। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত। খেলার মাঠ থেকে রং তুলির জগতে সমান দক্ষতায় বিচরণ তার। বাঙালির কবি, বাঙালা ভাষাভাষি মানুষের কবি, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষির কবি, বিশ্বকবি ও দার্শনিক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
 
মাহবুবা করিম বলেন, অভিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গের শিলাইদহ, শাহজাদপুরসহ যে ৬টি স্থানে রবীন্দ্রনাথ থেকেছেন এবং যাতায়ত করেছেন, সেসব স্থানে  আর্টক্যাম্পের আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমি। এখানে বাংলাদেশের প্রতিথযশা চিত্রশিল্পদের রং তুলিতে স্বরূপে ওঠে আসেন রবীন্দ্রনাথ। কোথা তিনি ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছেন, আবার কোথাও কবি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন।  আর্টক্যাম্পে আঁকা ছবিগুলো সমন্বযে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় শিল্পকলা একডেমি গ্যালারিতে আয়োজন করা হয় ‘রং তুলিতে রবীন্দ্রনাথ চিত্র প্রদর্শনীর’। যেখানে রবীন্দ্র নাথের আঁকা ৪৫টি রেপলিকা স্থান পেয়েছে।  

কিছুটা থেমে গেলেন মাহবুবা। একটু ভেবে নিয়ে বলেন, জানো আমাদের সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ। বাংলা ভাষাভাষি মানুষই কেবল নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষির মানুষ রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য-সঙ্গীত নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন। নজির রয়েছে বহু ভিন দেশের মানুষ রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়তে ও গান গাইতে বাংলা ভাষা শিখেছেন। অনেকে এই মনিষীকে নিয়ে গবেষণা করতে বাংলা ভাষাকে পাজরে ঠাঁই দিয়েছেন। 

রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের ৬টি স্থানে বসবাস করেছেন এবং যাতায়ত করেছেন। আমাদের এবারের ছিলো ব্যতিক্রম কিছু করার। সেই ভাবনা থেকেই কবি যেসব স্থানে যাতায়ত করেন এমনটি ৬টি আর্টক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। সেখানে শিল্পদের আকা ছবিতে স্থান পায় কেবলই রবীন্দ্র।  বাংলাদেশের প্রতিথযশা চিত্রশিল্পীরা আর্টক্যাম্পে ‘রং তুলিতে রবীন্দ্রনাথে’র বন্দনা করেছেন। শিল্পীদের পরমমতায় আঁকা চিত্রকর্মে  ঠাঁই দিয়েছেন কবিকে। পরবর্তীতে এসব চিত্রকর্ম নিয়ে আমরা  ঢাকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একডেমি গ্যালারিতে ‘রং তুলিতে রবীন্দ্রনাথ চিত্র প্রদর্শনীর’ আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনীতে রবীন্দ্র নাথের আঁকা ৪৫টি রেপলিকা স্থান পেয়েছে।

চিত্রপ্রদর্শনী সম্পর্কে বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথে ডুব দেন মাহবুবা করিম। আবেগ তাড়িত কণ্ঠে জানালেন, বাংলার কবি, বাঙালির কবি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করেন মাহবুবা। বলেন, তার বিশালতায় আমরা হাবুডুবু খাই। শুধু বাংলা ভাষাভাষি কেন, ভিন্ন ভাষাভাষির মানুষও রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্ম নিয়ে কাজ করছেন এমন বহু নজির রয়েছে।  

উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়েছে।  কবির সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। 

১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়।  দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন। ১৯৪১ সালে দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনে বিশ্বকবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।