Sri Lanka-Pakistan: শ্রীলংকার পর পাকিস্তানও একই পরিণতির পথে! 

Sri Lanka-Pakistan: শ্রীলংকার পর পাকিস্তানও একই পরিণতির পথে! 

হাইলাইটস


‘কোন দেশের জিডিপি আর ঋণের অনুপাত যদি ৪০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি হয়, তখন অর্থনীতির বিবেচনায় ধরে নেওয়া হয় দেশটি দেউলিয়া হওয়ার পথে এগোচ্ছে’  ‘পাকিস্তান কোনোদিন শ্রীলংকার পরিণতি বরণে দাওয়াত দিয়ে মানুষ খাওয়াবো শ্রীলংকার সাম্প্রতিক সংকট ও খাস দিলে বাংলাস্তানিদের প্রসঙ্গ, 

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল 


 
দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলংকার পর সম্ভবত পাকিস্তানও একই পরিণতির পথে হাটছে! আমি যে পাকিস্তান বিরোধী, সেজন্য আর ঘোষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি না। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি কোনোদিন ভেঙে গেলে কিংবা শ্রীলংকার পরিণতি বরণ করলে ‘দাওয়াত করে মানুষ খাওয়াবো, একথা নিশ্চিত বলতে পারি। একারণে একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অমন মন্তব্য করছি, তা কিন্তু নয়। ‘কোন দেশের জিডিপি আর ঋণের অনুপাত যদি ৪০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি হয়, তখন অর্থনীতির বিবেচনায় ধরে নেওয়া হয় দেশটি দেউলিয়া হওয়ার পথে এগোচ্ছে’

‘শ্রীলংকার বিষয়টি যারা জানেন না, তাদের অবগতির জন্য মনে করিয়ে দিতে চাই যে, ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারত তার আকাশপথ পাকিস্তানি বিমানের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও, চীনের মিত্র পাকিস্তানিদের বিমান চলাচলের জন্য নিজ আকাশসীমা উন্মুক্ত রেখেছিল শ্রীলংকা’

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অনুপাত তথা রেশিওটি ২২ শতাংশ আর শ্রীলংকার ১০৪। পাকিস্তানের বেলায় কিন্তু রেশিওটি বিপৎসীমা ছাপিয়ে এখন পা রেখেছে ৪১ শতাংশে। চীনের সহায়তায় পাকিস্তান যে ‘পাকিস্তান চায়না ইকোনমিক করিডোরটি নির্মাণ করছে, এরই মধ্যে তা পাকিস্তানের গলার ফাঁসে পরিণত হয়েছে’। এবারে তার ওপর যোগ হলো আরেক দফা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। 

স্বাধীন পাকিস্তানের রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় মেয়াদের মাঝপথে এসে গদিচ্যুত হয়েছে পাকপ্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিয়াজি। চীনের ডেবট ট্র্যাপে (Death Trap) তথা মরন ফাঁদে পা দিয়ে অন্ধকারে ডুবতে বসা এ দুটো দক্ষিণ এশীয় দেশই এই অঞ্চলে চীনের সবচাইতে বড় বন্ধু।  

পাকিস্তানের সাথে চীনের ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। একাত্তরে পাকিস্তানের সমর্থনে চীন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তাদের ভেটো প্রয়োগ করেছিল। 

এক্ষেত্রে ‘শ্রীলংকার বিষয়টি যারা জানেন না, তাদের অবগতির জন্য মনে করিয়ে দিতে চাই যে, ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারত তার আকাশপথ পাকিস্তানি বিমানের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও, চীনের মিত্র পাকিস্তানিদের বিমান চলাচলের জন্য নিজ আকাশসীমা উন্মুক্ত রেখেছিল শ্রীলংকা’। 

সে কারণেই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আকাশপথে ঢাকায় নিয়মিত সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো সম্ভব হয়েছিল পাকিস্তানের পক্ষে। অথচ চীনের ঘনিষ্ঠতম এই দুই মিত্রই আজ চীনা মার্শাল আর্টের প্যাঁচে কুপোকাৎ। তারা বুঝতেই পারেনি তাদের ‘অমন বিশ্বস্ত বন্ধুটি’ কখন সুই বেশে ঢুকে ফাল হয়ে দাঁড়িয়েছে! 

কভিড সচেতনতায় রাজপথে অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপনীল 

শ্রীলংকার এমন পরিণতিতে অবশ্য চোখ কান খুলে গেছে অনেকেরই। মালয়েশিয়া সরকার সম্প্রতি চীনের একটি বড় ঋণ প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। এই তো কদিন আগেই এরকম একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেপাল সরকারও । কাঠমান্ডু সফররত চীনা বিদেশমন্ত্রী ঋণ প্রস্তাবে সাফ না জানিয়ে দিয়েছেন সে দেশে তার কাউন্টার পার্ট।

এত কিছু বলার মানে কিন্তু এই নয় যে এর মাধ্যমে চীন বা কোন বিশেষ দেশের পক্ষে বিপক্ষে কোন মতামত সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সময় থেকেই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিদেশনীতিতে কারও প্রতি ‘বৈরিতা বর্জন’ করা হয়েছে। বর্তমান পুঁজিবাদী বৈশ্বিক ব্যবস্থায় চীনকে বাদ দিয়ে কোনো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সফল হতে পারে না। লাদাখের পাহাড় চূড়ায় দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে যত হাতাহাতি আর ফাটাফাটিই চলুক না কেন, তারপরও ভারতের সাথেও চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক খুবই দৃঢ়। চীনকে দোষ দেওয়ারও কিছু নেই। বাণিজ্যে জিতলেই বণিকের ‘বসতি লক্ষ্মী’। আমি বোকার মতো বাণিজ্য করবো আর আমি হারলে বণিকের দোষ, এমন ঢালাও দোষ দেওয়াটা কিন্তু দোষের।

পাকিস্তানের সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান 

এত কিছুর পরও আমাদের শ্রীলংকা হওয়ার আশংকা কি একেবারেই নেই! অস্বীকার করার উপায় নেই যে, তেমন একটি তাত্ত্বিক শংকা নিশ্চই আছে। যদি বাংলাদেশে এমন কোনো নেতৃত্ব আসে যারা শেখ হাসিনার মতো অমন প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পটিয়সী নন, তবে তেমনটি ঘটতেই পারে। তেমনটা ঘটতেই পারে যদি দেশটার চালিকাশক্তির নেপথ্যে রাজনীতিবিদদের হাত থেকে ব্যবসায়ীদের হাতে হস্তান্তরিত হয়। 

আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের কথাই ধরা যাক। যে কোনো বিবেচনায়ই শিল্পটি আজকের বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য সাফল্যগাথার নেপথ্যের অন্যতম শক্তি। পৃথিবীর কোথাও গার্মেন্টস শিল্প এতো দীর্ঘদিন টিকে থাকেনি কিংবা দেশের অর্থনীতিতে এমন অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারেনি, যেমনটি বাংলাদেশের বেলায় ঘটেছে। নারীর ক্ষমতায়নেও এদেশের গার্মেন্টস শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। এজন্য গার্মেন্টস শিল্পোদ্যোক্তাদের অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হবে। তারা চাইলে বহু আগেই গার্মেন্টেসের মধুটুকু সাবাড় করে কানাডার বেগম পাড়ায় পাড়ি জমাতে পারতেন। তবে এও ঠিক যে ‘পৃথিবীর কোথাও গার্মেন্টস শিল্পে মালিকরা ক্ষমতার এত কাছাকাছি আসতে পারেননি। বাংলাদেশে যে ক’জন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এমপি, মেয়র বা মন্ত্রী রয়েছেন, পৃথিবীর অন্য কোথায় তেমনটি নেই’

কোভিডকালীন সময়েও এই শিল্প যতটা সরকারি প্রণোদনা আদায় করে নিয়েছে, তার ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারেননি অন্য কোনো খাত। ‘কোনো দেশীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী যদি কখনো নিজেদের লাভের প্রত্যাশায় শ্রীলংকা বা পাকিস্তানের মতো সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে প্রভাবিত করে বসতে পারে, তবে বাংলাদেশেরও শ্রীলংকা হতে দেরি হবে না’। তবে আমার বিবেচনায় সেই শংকাটুকুও অমূলক। এর কারণ ‘একজন শেখ হাসিনা’ আর সাথে একাত্তরের প্রতি তার এবং তার পরিবারের আনুগত্য।

ইউক্রেন প্রশ্নে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট না দেয়ার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছেন, তিনি ‘একাত্তরে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা ভুলে যাননি’। এই একটি বক্তব্য থেকে তার চিন্তা আর চেতনার স্বচ্ছতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এসব বিষয়ে আমরা যেমন বুঝি, তারাও কিন্তু  বোঝে-যারা চায় বাংলাদেশের পরিণতি হোক শ্রীলংকার মতো। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের আগে ছুটতে দেখে অনেকের গাত্রদাহ হয়। 

রাজপথে শ্রীলংকার আমজনতা 

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে ক্লাসে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে অথবা তেজগাঁও কলেজের প্রভাষক লতা সমাদ্দারের টিপ পরাকে কেন্দ্র করে কিংবা নওগাঁর মহাদেব উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা অমোদিনী পালকে হিজাব বিতর্কে জড়িয়ে যারা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক ‘সম্প্রীতির বাতায়নটা বিনষ্ট’ করতে চায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের উদ্দেশ্যগুলো একেবারেই পরিষ্কার।

তাদের লক্ষ্য একটাই, সংখ্যালঘ্যু সম্প্রদায়কে চাপে ফেলে ‘বাংলাদেশ ভারতের মৈত্রীময়’ সম্পর্কে প্রশ্নেমুখে ফেলে দেওয়া। অবশ্য যারা এমন দিবাস্বপ্ন দেখেন, তারও খুব ভালো করেই জানে যে, বাংলাদেশ আর ভারত যখন পাশাপাশি দাঁড়ায় তখন তারা একে অপরের জন্য রক্ত ঝরাতে দ্বিধা করে না। এই মিলিত শক্তি এতোটাই মজবুত যার সামনে বাংলার কাদাপানিতে নাকানি-চুবানি খেতে বাধ্য হয় পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম সেনাবাহিনীটিও। কাজেই শ্রীলংকাকে টেনে এনে এরপর যদি আপনার সামনে কেউ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে, তাহলে বুঝে নেবেন হয় খুব বেশি বোকা, নচেৎ তার গোড়ায় ত্রুটি রয়েছে। তিনি না বাংলাদেশি, না পাকিস্তানি। তিনি খাস দিলে একজন ‘বাংলাস্তানি’

 লেখক : অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল পেশায় একজন বিশিষ্ট চিকিৎসকই নন, একাধারে তিনি একজন ভালো বক্তা, লেখক এবং সাংগঠনিক ব্যক্তিত্ব এবং আঞ্চলিক পরামর্শক বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। এছাড়াও তার পেশা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তিনি ভারত, যুক্তরাজ্য এবং মালয়েশিয়া থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। জাপানের ‘ehime university graduate school of medicine, matsuyama’--এর ভিজিটিং প্রফেসর। ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বাংলাদেশের জাতির পিতার নামে দেশটির প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের প্রধান এবং সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ