Tanuja Devvarman : সুরে সুরে সমাজের মলিনতা দূর করতে চান তনুজা দেববর্মন

‘আগামী দিনগুলোতে সাংস্কৃতিক উন্নয়নে কাজ করার সংকল্প রয়েছে শিল্পীর। তিনি মনে করেন, সংস্কৃতি হচ্ছে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। তাই ‘সুরে সুরে সমাজের মলিনতা দূর করতে চান’ প্রতিথযশা কণ্ঠশিল্পী তনুজা দেববর্মন’
উদয়ন চৌধুরী
সুরের সঙ্গেই তার বসবাস। সকাল-সন্ধ্যা অষ্টপ্রহর হৃদমন্দিরে কেবল সুরের আবহ। সুরের সাধনায় মশগুল হয়েই জীবন কাটিয়ে দেবার বাসনা তার। নাম তনুজা দেববর্মন। একের মধ্যে বহুগুণাবলি তার। একাধারে নিয়ম করে গানের চর্চা, ঘর-সংসার, সামাজিক দায়িত্ব পালন, সংগঠক এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের স্থায়ী বাসিন্দা। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য তার মন কাঁদে। অগ্রসর শ্রেণীর মানুষের জন্য সবার অলক্ষ্যে যতটুকু সম্ভব হাত বাড়ান।
গানের হাতে খড়ি যথারীতি পারিবারিকভাবেই। শৈশব থেকেই গানের নেশা তার। বলা যায় বাউল-বৈরাগীর একতারার সুর শুনে ছুটে যেতে বাড়ির কাছের আখড়ায়। মনোমুগ্ধ হতেন গানের সুরে। সুরমুর্ছূনায় হারিয়ে যেতেন। সেই সুর কি ছাড়া যায়? এ যে মনের গহিনের বাসিন্দা। তাই সুরের স্রোতস্বীনিতে গা ভাসালেন তনুজা।
লেখাপড়ার পাশাপাশি কঠিন অনুশীলনের মধ্য দিয়ে গানের চর্চা। কোমলমতি তনুজার ধ্যান-জ্ঞান কেবলই গান। পড়ার টেবিলে, সতীর্থদের সঙ্গে আড্ডায়, খেলায় সবখানেই তার সঙ্গী সুর। সুর পাগল তনুজা দেববর্মন ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠার সিঁড়িতে হাটতে থাকেন।
জানালেন সবরকমের গানই করে থাকেন। বিশেষ করে শচীন কর্তার গানে তিনি অনন্য। লোকসঙ্গীত, আধুনিক এবং হিন্দ গানের সুর স্বয়ং বিধাতা তার গলায় তুলে দিয়েছে। লতা মঙ্গেশকরের গান যেন জন্মগতভাবেই তার গলায় ওঠে এসেছে। এক অসাধারণ কণ্ঠের অধিকারী তনুজা অবলীলায় যেকোন গান গেয়ে যেতে পারেন। জাতশিল্পী যাকে বলে।
শচীন কর্তার গান নিয়ে দু’বাংলায় সমান জনপ্রিয় এই শিল্পী। নিরহংকার, কোমল কণ্ঠের এই শিল্পী মানবকল্যাণে তার গানকে নিবেদীত করেছেন। একমাত্র সন্তানও তার গানের সঙ্গী। বাবা চলে যাবার পর সেই স্থানটি পুরণ করেছেন স্বামী। কখনও তনুজাকে বাবার কষ্টকে মনে করতে দেননি। এক অসাধারণ বন্ধনে গড়েছেন কাঙ্খিত সংসার। যেন শান্তির শীতল ছায়ায় সঙ্গীতের সাধনার মন্দির গড়েছেন তনুজা দেববর্মন।
যে কোন আয়োজনে সরব উপস্থিতি
ত্রিপুরার আগরতলার বাসিন্দা তনুজা। সঙ্গীতের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। জানালেন, তার সব কাজই মানবকল্যাণের জন্য। ‘মানবসেবার সেবাই ধর্ম, কর্মই জীবন’ এই মন্ত্রে দীক্ষিত তনুজা প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করতে সাহসিনী এক হার না মানা নারী। যিনি নিজেকে কখনও অবলা ভাবেন না।
বাবা-মায়ের পর স্বামীর অনুপ্রেরণাকে সঙ্গী করে নিজেকে সঙ্গীতাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাই বহুমাত্রিক অভিধাটি তাকেই মানায়। এ কারণেই আজকের সমাজে একজন আলোকিত নারী তিনি। নিজেকে আপন বলয়ে আত্মকেন্দ্রিকতার দেয়ালে বন্দী না রেখে তিনি সমর্পিত হয়েছেন বহুজনের মাঝে শুভ, সুন্দর, কল্যাণের মঙ্গলালোকে। তিনি আমাদের সমাজের শুভবোধের সারথী।
আগামী দিনগুলোতে সাংস্কৃতিক উন্নয়নে কাজ করার সংকল্প রয়েছে শিল্পীর। তিনি মনে করেন, সংস্কৃতি হচ্ছে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। তাই ‘সুরে সুরে সমাজের মলিনতা দূর করতে চান’ প্রতিথযশা কণ্ঠশিল্পী তনুজা দেববর্মন।