World Water Day : বিশ্ব জল দিবস

ছবি সংগ্রহ
‘দিবসেই তোড়জোড়, তারপর সব গতানুগতিক, অপরিকল্পিতভাবে জল উত্তোলনের ফলে
জলের স্তর নেমে গিয়েছে ৩০ থেকে ৯০ ফুট অথবা তার চেয়েও বেশি’
ড. বিরাজলক্ষ্মী ঘোষ
জলের অপর নাম জীবন। এই জলের জন্য এখনই হাহাকার। এপার বাংলা, ওপার বাংলার চিত্রটা একই। জলসম্পদের প্রতি চরম অবহেলা। জলাভূমি ভরাট যেন আজ উৎসব। নদীনালা, খালবিল থেকে শুরু বাড়ির পুকুরও হারিয়ে যাচ্ছে। কদিন পরই সেখানে মাথা তুলছে ইটপাথরের ইমারত! ফলে দিন দিন বাড়লে জলের চাপ। ফলাফল ভূগর্ভস্থ জলের স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে।
এক সময়ে নলকূপ বসাতে যেখানে ৫০/৬০ ফুট পাইপ হলেই চলতো, এখন সেখানে কয়েক শ’ ফুট পাইপ বসানোর পরও জল মিলছে না। মনুষ্য সৃষ্ট সমস্যা প্রকট তুলছে চলমান জীবন ব্যবস্থা। যেখানে জল সংকট একটা নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছে, সেখানে জলের অপচয়ও কিন্তু নেমে নেই। কলকাতার রাস্তায় অনেক জলের কল রয়েছে, যা দিয়ে জল গড়াচ্ছে রাজপথে।
এবছর জল দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘ভূগর্ভস্থ জল: অদৃশ্য সম্পদ, দৃশ্যমান প্রভাব’। ক্যান্ডারের হিসেবে ২২ মার্চ ‘বিশ্ব জল দিবস’। বিশ্বের অন্যসব দেশের মতো আমরাও তা পালন করে থাকি। দিনটি উপলক্ষে আলোচনা সভা, সেমিনার হয়। তা সংবাদমাধ্যমে ছাপাও হয়। দিবস পালন এখন এরই মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। ১৯৯৩ সালে রাষ্ট্রসংঘ সাধারণ সভায় ২২ মার্চ বিশ্ব জল দিবস পালনের ঘোষণা আসে।
নদীমাতৃক কৃষি নির্ভর বাংলায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও সামগ্রিক উন্নয়নে সঠিক ও পরিকল্পিত জল সম্পদ ব্যবস্থাপনার ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ দুটোই কৃষি প্রধান। ফসল উৎপাদন, সেচ ও গৃহস্থালি কাজে ভূ-গর্ভস্থ জলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাটির তলার জলের আধার সুরক্ষা ও জলের গুণাগুণ বজায় রাখতে ভূ-উপরিস্থ ও ভূ-গর্ভস্থ জলের সমন্বিত ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাটা আমাদের জন্য জরুরী।
১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনের (ইউএনসিইডি) এজেন্ডা ২১-এ প্রথম বিশ্ব পানি দিবস পালনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়। ১৯৯৩ সালে প্রথম বিশ্ব পানি দিবস পালিত হয় এবং তার পর থেকে এই দিবস পালনের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
উল্লেখ্য. নদী, হ্রদ, পুকুর, খাল, বিল, দীঘি, সায়র ইত্যাদির অবনতিশীল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ইরানের রামসারে জলাভূমি কনভেনশন গৃহীত হয়। তাতে জলাভূমি রক্ষায় একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হয়। এরপর থেকে সরকারী সংস্থা, বেসরকারী সংস্থা এবং সম্প্রদায়ের সকল স্তরের নাগরিক গোষ্ঠী জলাভূমির মূল্যবোধ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে এবং সংরক্ষণের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্দেশ্যে এই দিনটি প্রতি বছর বিশ্ব জলাভূমি দিবস হিসাবে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়।
দিবসটি উদযাপনের উদ্দেশ্য হল পৃথিবীর জন্য জলাভূমির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। বিশ্ব জলাভূমি দিবস সাধারণ জনগণকে প্রকৃতির কাছে জলাভূমির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সুযোগ করে দেয়া। রাষ্ট্রসংঘের সদস্য দেশগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও পরিচ্ছন্ন জল ও জলসম্পদ রক্ষা সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য এই দিন বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়ে থাকে।
বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা জলে তলিয়ে যায়। কোন কোণ অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে জলের ঘাটতি মোকাবেলা করছে। শুষ্ক মৌসুমে কৃষিকাজে ভূ-উপরিস্থ সেচ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা পূরণে সেচকাজে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার করা হয়। অতিমাত্রায় ভূগর্ভস্থ জলের উত্তোলনের ফলে জলে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যাবার পাশাপাশি নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর। এতে করে বাড়ছে ঝুঁকি। ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নেমে যাওয়াকে কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় তা নিয়ে এখনই ভাবনার সময়।