World Wetlands Day : বিশ্ব জলাভূমি দিবস  

World Wetlands Day : বিশ্ব জলাভূমি দিবস   

ছবি সংগ্রহ 

 

ড: বিরাজলক্ষী ঘোষ

 

নদী, হ্রদ, পুকুর, খাল, বিল,দীঘি, সায়র ইত্যাদির অবনতিশীল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি ইরানের রামসারে জলাভূমি কনভেনশন গৃহীত হয় এবং জলাভূমি রক্ষার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তারপর  থেকে  সরকারী সংস্থা, বেসরকারী সংস্থা এবং সম্প্রদায়ের সকল স্তরের নাগরিক গোষ্ঠী জলাভূমির মূল্যবোধ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে এবং সংরক্ষণের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্দেশ্যে এই দিনটি প্রতি বছর বিশ্ব জলাভূমি দিবস হিসাবে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। এই দিবসটি উদযাপনের উদ্দেশ্য হল পৃথিবীর জন্য জলাভূমির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। বিশ্ব জলাভূমি দিবস সাধারণ জনগণকে প্রকৃতির কাছে জলাভূমির গুরুত্ব উপলব্ধির সুযোগ দেয়।

বিশ্ব জলাভূমি দিবস 2022 এর থিম হল,

"মানুষ এবং প্রকৃতির জন্য জলাভূমি অ্যাকশন" 2022 সালের থিমটি মানুষের এবং নীল গ্রহের স্বাস্থ্যের জন্য জলাভূমির সংরক্ষণ এবং তার ধারণযোগ্য ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের গুরুত্বকে তুলে ধরে।

 

সাধারণভাবে জলমগ্ন এলাকা বা জলা জায়গা হলো জলাভূমি।প্রকৃতপক্ষে কর্দমাক্ত জায়গা, নোনা জল জায়গা,পরিত্যক্ত নদীগর্ভ , খাল ,বিল, ঝিল ,পুকুর, ডোবা, সায়র প্রভৃতিকে জলাভূমি বা Wet Land বলা হয়।জলাভূমি প্রকৃতি বা মনুষ্য সৃষ্ট হতে পারে।আজকের পৃথিবীতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জলাভূমি সংরক্ষণ ও তার উন্নয়ন।

 

এককথায় বলা যায় পরিবেশের সুস্থতা ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা এবং সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সুস্থ জীবনযাত্রা বজায় রাখা ও জীবকুলের সহজ অস্তিত্বকে সুরক্ষিত করার কাজে জলাভূমি অসামান্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

না না কারণেই জলাভূমি সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

 

1.জলাভূমি ভূগর্ভে জল সঞ্চয়ের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জলস্তর এ জলের ভারসাম্য বজায় রাখে।

2.জলাশয় গুলি বাস্তুতন্ত্র তথা জীব বৈচত্র্য কে সুরক্ষিত করে ও জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ এর জীবনধারণ কে সুনিশ্চিত করে যার প্রভাব পড়ে সমস্ত পরিবেশের উপর।

3.জলাভূমি কে ঘিরে বিভিন্ন চাষ আবাদ ও বহু মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয়।

4.শহরাঞ্চলে দূষিত জল নিষ্কাশনে জলাভূমি গুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।জলাভূমি শহরের কিডনির কাজ করে।ময়লা জল জলাভূমিতে যুক্ত হলে সেটা প্রাকৃতিক উপায়ে শোধিত হয়।সূর্যরশ্মি,অক্সিজেন ও ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে ওই জল আসতে আসতে দূষণ মুক্ত হয়।

5.জলাভূমি আবার শহরের ফুসফুস।জলাভূমি মাধ্যমে সম্পাদিত হয় প্রাকৃতিক উপায়ে দূষণ মুক্তি করণের প্রক্রিয়া।যা মানুষকে একটু শুদ্ধ বাতাস দেয়।

6.পতিত জলাভূমি গুলিকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে দূষণের মাত্রা  অনেকটা কমানো যায়।

সেকারণেই জলাভূমি ও তৎ সংলগ্ন বনাঞ্চল ও মুক্ত অঞ্চলগুলোকে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

 

এক কথায় জলাভূমি কোনো অঞ্চলের মানুষ তথা জীবকুলের জীবন যাত্রাকে সুরক্ষিত করে থাকে।জলাভূমি গুলিতে জলজ প্রাণীর সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশ সম্ভবপর হয়,আবার মানুষ ও এই জলাশয় গুলিকে কেন্দ্র করে মাছ চাষ ,ছোট খাটো সব্জি চাষ সহজেই করতে পারে ও তাদের জিবিকে নির্বাহ করতে পারে।শহরাঞ্চলে জলাভূমি গুলি প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। হাওড়া,  কলকাতার মত ঘনবসতি পূর্ণ ও উচ্চ বায়ু দূষণ যুক্ত শহরের পরিবেশে জলাভূমি গুলি এক প্রকার ত্রাণকর্তার কাজ করে।পূর্ব কলকাতা জলাভূমি খালটি প্রায় ২৮কিমি পথ অতিক্রম করে কুলটির বিদ্যেধরি নদীতে মিশেছে যা দৈনিক প্রায় ১৭০ মিলিয়ন গ্যালন ময়লা জল নিষ্কাশন করে।

 

কিন্তু দুঃখের বিষয় না না কারণে জলাভূমি গুলো বর্তমানে অবলুপ্তির মুখে।একদিন অপরিকল্পিত নগরায়ন ও অন্যদিকে বিকাশের ধাক্কায় বহু জলা ভূমি তাদের অস্তিত্ব হারাচ্ছে।বদলাচ্ছে নদীর গতিমুখ।কোনো এলকা অধিকাংশ ভাবে জলমগ্ন হচ্ছে কোথায় বা দেখা যাচ্ছে মারাত্মক খরা। অজস্র গাছ প্রাণ হারাচ্ছে।দূষিত বাতাস আমাদের ফুস ফুস কমজোরী করছে।বাড়ছে ভাইরাসের প্রকোপ এবং সর্দিবকাশির মত ব্যাধির মারাত্মক প্রভাব।শিশুরা অ্যাস্থমার স্বীকার হচ্ছে।অল্প বর্ষায় ডুবে যাচ্ছে শহর।জল নিষ্কাশন সম্ভব হচ্ছেনা।দীর্ঘদিন বিভিন্ন এলাকার মানুষ জল বন্দী থাকছেন।

১৯৮৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ সারকার Institute of Wet Land Management And Ecological Design নামে একটি গবেষণা সংস্থা গঠন করেছিল যার কাজ হলো জলাভূমি সংরক্ষণ প্রশ্নে ব্যাপক গবেষণার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।কিন্তু কাগজে কলমে নয় হাতে কলমে কাজের প্রয়োজন।বর্তমানে শহরের বিভিন্ন জলাভূমি গুলো উন্নয়নের লক্ষ্যে বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে।কিন্তু তাতে মানব তথা সমস্ত প্রাণীকুলের বিপদ আসন্ন।এবিষয়ে সরকারি উদ্যোগ ও জনসচেতনতা বিশেষ ভাবে প্রয়োজন।তাহলে জলা ভূমি গুলিকে সুন্দর ভাবে ব্যবহার করা যায় চাষাবাদ,নিষ্কাশন পর্যটন ও পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে। বর্তমানে জলাভূমি গুলি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে এলাকা ভিত্তিক ভাবে পথে নামছেন সাধারণ মানুষ ও পরিবেশ প্রেমী সংগঠন গুলি।কিন্তু সব বুঝেও প্রশাসন কানো এগুলির সংরক্ষণে নীরব?কেন সর্বত্র জলা বোঝানো নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা হচ্ছে না?কেবল মাত্র মুনাফার লোভে কি এক শ্রেণীর মানুষ চুপ থাকবেন? এ প্রশ্নের উত্তর অবিলম্বে না খুঁজলে  সভ্যতা ধ্বংসের পথে পা বাড়াবে।

  লেখক : ড: বিরাজলক্ষী ঘোষড: বিরাজলক্ষী ঘোষ, শিক্ষাবিদ